Popular Posts

It is only memory

Sweet memory of Humayun Faridi


Humayun Faridi and Subarna Mustafa



Humayun Faridi passes away news video from Somoy TV

Humayun Faridi passes away news video from Somoy TV

হুমায়ুন ফরিদী স্মরনে ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকের (১৯৮৮-৮৯) রিভিউ


হুমায়ুন ফরিদী স্মরনে ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকের (১৯৮৮-৮৯) রিভিউ

Humayun Faridi

সংশপ্তক নাটক প্রচারের অনেক আগে থেকেই হুমায়ুন ফরিদী মঞ্চ এবং টিভি নাটকের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা ছিলেনএই নাটকটিকে তার শ্রেষ্ঠ কাজও বলা যায় নাতবুও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হিসেবে বেশিরভাগ মানুষই বোধহয় কান কাটা রমজানকেই পছন্দ করবেন
ভয়ংকর কুটিল এবং ধুরন্ধর এবং একই সাথে কিছুটা কমেডি ধাঁচের রমজান চরিত্রটি ফরিদী যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তার কোন তুলনা হতে পারে নাব্ল্যাক কমেডির সার্থক চিত্ররুপ বলা যেতে পারে নাটকে তার অংশটুকুকেনাটকের অন্যসব জাঁদরেল অভিনেতা/অভিনেত্রীদের প্রতি পূর্ন সম্মান রেখেই বলছি, ফরিদীর সামনে নিষ্প্রভ মনে হত সবাইকেই
আমাদের সবার প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে বসন্তের প্রথম প্রহরে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেনপ্রকৃতি আজ নতুন ফুল আর পাতা দিয়ে নিজেকে অপরুপা সাজিয়ে বিদায় জানাবে এই মহান অভিনেতাকেনিয়ে যাবার জন্য বড় চমৎকার একটা দিন বিধাতা বেছে দিয়েছেন তার জন্যআফসোস শুধু এখানে যে এই দিনটা আরও অনেক বছর পরে আসতে পারত
তার আত্মার অপার শান্তিকামনা করে এবং বর্নাঢ্য অভিনয়জীবনকে অসীম শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ তার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কাজ সংশপ্তকের স্মৃতিচারণ করতে চাই
প্রাইভেট প্রডাকশন অর্থাৎ প্যাকেজ নাটক আসার (১৯৯৪) আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকগুলিকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায় হুমায়ুন আহমেদ যুগ (১৯৮৫-৯৪) আর হুমায়ুন আহমেদপূর্ব যুগ (১৯৬৪-৮৫)১৯৮৫ সালে এইসব দিনরাত্রি ধারাবাহিক দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ টিভি নাটকের ইতিহাস নতুন করে লেখার আগে অনেক ধারাবাহিকই প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যেমন সকাল সন্ধ্যা, ভাঙনের শব্দ শুনি, আমি তুমি সে ইত্যাদিকিন্তু এইসব দিনরাত্রির পর এক যুগেরও বেশি সময় হুমায়ুন একাই টিভি নাটকের জনপ্রিয়তার সিংহাসন দখল করে ছিলেনহুমায়ুন আহমেদের এই একচেটিয়া রাজত্বে একটি নাটকই কিছুটা ভাগ বসাতে পেরেছিল শহীদুল্লাহ কায়সারের সংশপ্তক
বাংলা সাহিত্যে শহীদুল্লাহ কায়সার অমর থাকবেন তার দুটো কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ এবং সংশপ্তকের জন্যতার অমরত্বকে আরো পাকাপোক্ত করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৯৭৮ সালে সারেং বৌ ছবিটি নির্মান করেএর দশ বছর আব্দুল্লাহ আল মামুনই আবার শহীদুল্লাহ কায়সারের আরেকটি উপন্যাস সংশপ্তককে টিভিতে নিয়ে আসা্র উদ্যোগ নেন
বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংশপ্তকের ইতিহাস কিছুটা অভিশপ্ত১৯৭১ সালে প্রথমবার ধারাবাহিক হিসেবে এটি নির্মান শুরু হয়েছিলমাত্র চার পর্ব প্রচারের পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর যেকোন কারনেই হোক এটি আবার শুরু হয়নিবহু বছর পর আবার যখন ১৯৮৮ তে শুরু হয়, এক বা দুই পর্বের পর এবারও ভয়াবহ বন্যার কারনে এর কাজ বন্ধ হয়ে যায়এসময় প্রায় দুই মাস কোন ধরনের বিনোদনমুলক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়নিসারা সন্ধ্যা টিভিতে মহান কবি (?!) এরশাদের তোমাদের কাছে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা আমারগানের ভিডিও প্রচার করা হত
এবার অবশ্য বন্যা শেষ হবার পর নাটকটা আবার শুরু হলউপন্যাস থেকে নাট্যরুপ দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ইমদাদুল হক মিলনপ্রথম কয়েক পর্বের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং আল মনসুর যৌথভাবে থাকলে কোন এক অজ্ঞাত কারনে শেষের দিকের পর্বগুলি নির্মান করেন মোহাম্মদ আবু তাহেরআবহ সঙ্গীতে আনিসুর রহমান তনুতবে অতিথি শিল্পী হিসেবে আলম খান এর একটা দুর্দান্ত সুচনা সঙ্গীত রচনা করে দেন
[যে চরিত্রগুলির নাম মনে আছে, সেগুলি ব্র্যাকেটের মধ্যে দেয়া হল]
তিরিশ দশকের আশেপাশে বাংলার এক কোনে এক ছোট্ট গ্রাম বাকুলিয়াগ্রামের এক প্রান্তে মিয়া বাড়ি, আরেক প্রান্তে সৈয়দ বাড়িমিয়া বাড়ির প্রধান এ অঞ্চলের জমিদার খলিলুল্লাহ খান (মিয়ার ব্যাটা) আর সৈয়দ বাড়ির প্রধান দিলারা জামান আপন ভাইবোনদিলারার মেজো ছেলে তারিক আনাম আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, প্রগতিশীল ও আধুনিক শিক্ষিত যুবকএই বাড়িতে আরও থাকে দিলারার পীরের মেয়ে সুবর্না মুস্তফা (রাবেয়া ওরফে রাবু)খলিলুল্লাহ খানের নায়েব অত্যন্ত ধুরন্ধর হুমায়ুন ফরিদী (রমজান)খলিল ট্র্যাডিশনাল বংশগরিমায় অহংকারী বদমেজাজী জমিদারপ্রজাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তার খুব একটা চিন্তাভাবনাও নাই
এদের পাশাপাশি গ্রামে আরও আছে খেটে খাওয়া রাইসুল ইসলাম আসাদ (লেকু), তথাকথিত নষ্টা ও সমাজচ্যুত ফেরদৌসী মজুমদার (হুরমতি), আদর্শবাদী স্কুল শিক্ষক মামুনুর রশিদ আর নিম্নবিত্ত পরিবারের সদ্য কিশোর অঞ্জন (মালু)

Humayun Faridi

নাটকের কাহিনী সুস্পষ্টভাবে দুইভাগে বিভক্তপ্রথম বার পর্ব বাকুলিয়া গ্রামের মানুষের জীবনকাহিনী, জমিদারের শোষন, নায়েবের কূটচাল ইত্যাদিত্রয়োদশ পর্বে কাহিনী দশ বছর এগিয়ে নেয়া হয়এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ সময়এই সময়ের নাটকে ফোকাস বাকুলিয়া গ্রাম থেকে সরে যায় মালুর দিকেমালু বাড়ি থেকে পালিয়ে গানের দলে যোগ দেয়দলের ওস্তাদ ফকির আলমগীরআস্তে আস্তে নিজ যোগ্যতাগুনে শীর্ষপর্যায়ে পৌঁছায় মালুকাজ শুরু করে কলকাতা বেতারেএদিকে বাকুলিয়াতে হুমায়ুন ফরিদী নানা কূটবুদ্ধিতে খলিলকে সরিয়ে নিজেই জমিদার বনে যায় এবং ছেচল্লিশের ভয়াবহ দাঙ্গার সুযোগ নিয়ে হিন্দুদের ঘরবাড়ি দখল করে নেয়
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাজেট স্বল্পতায় পুরোনো সময়কে সাফল্যের সাথে চিত্রায়ন খুবই দুঃসাধ্য হলেও প্রতিভাবান প্রযোজকদ্বয় আবদুল্লাহ আল মামুন এবং আল মনসুর যথেষ্ট জাঁকজমক নিয়ে এবং প্রচুর হোম ওয়ার্ক করে ধারাবাহিকটি শুরু করেছিলেনফলে প্রথম পর্ব থেকেই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেধারাবাহিকের মাঝামাঝি পর্যায়ে প্রযোজক পরিবর্তনের পর এটি কিছুটা দিকভ্রষ্ট হয়ে যায়মোহাম্মদ আবু তাহের পূর্বসুরীদের সুনাম ধরে রাখতে পারেননি
হুমায়ুন ফরিদীর কাজ নিয়ে তো আগেই বলা হয়েছেনেগেটিভ চরিত্রে তার এই দুর্দান্ত অভিনয় দেখে নাটক শেষ হবার পরপরই চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন তাকে সন্ত্রাস (১৯৯১ সালের রোজার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত) ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয়ের আমন্ত্রন জানানফরিদী টেলিভিশনকে লম্বা সময়ের জন্য বিদায় জানিয়ে চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েনবাংলা ছবির পরিচালকেরা তার প্রতিভার কোন ব্যবহারই করতে পারেননিহাতে গোনা দুতিনটি ছবি ছাড়া প্রায় সব ছবিতেই তিনি মূলত এই রমজান চরিত্রটিরই পুনরাবৃত্তি করেছেনচলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রসঙ্গে টিভির এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘বানিজ্যিক ছবির অভিনেতার কাজ হচ্ছে ছবিটাকে বিক্রয়যোগ্য পণ্য করে তোলাতাই সেখানে কারেক্ট অভিনয়ের দরকার নেই
মালু চরিত্রে অঞ্জনের অভিনয় খুব জনপ্রিয়তা পায়এই নাটকের পরও সে দুএকটা কাজ এদিক-সেদিক করেছিলতারপর অন্য অনেক জনপ্রিয় শিশুশিল্পীর মত একদিন চুপচাপ হারিয়ে গেলমালুর ছোটবেলার খেলার সাথী হিসেবে তারিন দুএকটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিল
ত্রয়োদশ পর্ব থেকে মালু চরিত্রটি করেন মুজিবুর রহমান দিলুদিলু সুঅভিনেতা হলেও এই চরিত্রটিতে প্রচন্ড ব্যর্থ হনতার ব্যর্থতার পেছনে ছোট মালু চরিত্রের অঞ্জনের ইমেজ বেশ দায়ী ছিলএছাড়া এসময় আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং আল মনসুর প্রযোজনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর নাটকটি নিষ্প্রভ হয়ে যায়নাটকের গুরত্বপূর্ন বাকুলিয়ার চরিত্রগুলিকে বাদ দিয়ে গল্প এসময় মালুর কলকাতা জীবনকেন্দ্রিক হয়ে পড়েএইসব কিছু মিলিয়ে এই সময় এসে নাটকটি তার আকর্ষন হারায়
মঞ্চকর্মী লিয়াকত আলী লাকি (বাংলাদেশের মঞ্চ ইতিহাসে সর্বাধিক প্রদর্শিত নাটকে কঞ্জুসের নির্দেশক) এই ছবিতে খলিলের পেয়াদা কালু চরিত্রে অভিনয় করেনখুবই ছোট এবং অগুরুত্বপূর্ন চরিত্র, তবে এটাই লাকির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টিভি পারফর্মেন্সনাটকে তার গাওয়া একটি গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয় – “পরানের হুক্কারে, তোর নাম কে রাইখাছিল ডাব্বা
লেকু চরিত্রে রাইসুল আসাদ অপ্রতিদ্বন্দীখেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত চরিত্রে তার সমকক্ষ কেউ নেইমামুনুর রশিদ, তারিক আনাম এবং সুবর্না মুস্তফা চমৎকার
হুরমতি চরিত্রে ফেরদৌসি মজুমদার অসাধারন অভিনয় করেছেন, কোন সন্দেহ নাইঅভিনয়ে তাকে ছাড়ানো অসম্ভবকিন্তু চরিত্রের তুলনায় তার আসল বয়স কিছুটা বেশি ছিলএছাড়া চরিত্রটার চাহিদা ছিল একজন গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী যাকে দেখলেও লাখো পুরুষের মনে দোলা জাগেফেরদৌসি মজুমদারকে কোনভাবেই গ্ল্যামারাস বলা যায় নাএসব কিছুই তিনি তার দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেনতবে চম্পা বোধহয় এই চরিত্রের জন্য পারফেক্ট হতেন
এই নাটকের শুরুর ক্রেডিট অংশটা (যেখানে কলাকুশলীদের নাম দেখানো হয়) আলাদাভাবে উল্লেখের দাবি রাখেবিদেশি সিরিয়ালগুলি ধারন করা হয় সিজন বাই সিজন অর্থাৎ পুরো সিজন ধারন শেষ করার প্রচার শুরু হয়সেকারনে বিদেশি সিরিয়ালগুলিতে পুরো সিজনের উল্লেখযোগ্য অংশবিশেষ নিয়ে এক-দেড় মিনিটের ক্রেডিট অংশ তৈরী করে এই অংশের জন্য আলাদা থিম মিউজিক বানানো হয়বিটিভির ধারাবাহিকগুলি সেসময় পর্ব বাই পর্ব ধারন করা হত্প্রতি মঙ্গলবার ধারাবাহিক প্রচারিত হলেও যেহেতু একই সাথে দুটো ধারাবাহিক চলত, তাই একেক পর্বের জন্য তারা ১৪ দিন সময় পেতেনসেকারনে আকর্ষনীয় ক্রেডিট অংশ তৈরী করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত নাসাদামাটাভাবে স্থিরচিত্রের উপর নামগুলি দেখিয়েই তারা দায় সারতেনসংশপ্তক এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমএখানে পুরো নাটকের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ (হুমায়ুন ফরিদী বলছেন এসডিও সাহেবকে আমি সামলাব, আমার নাম হচ্ছে কাজী মোহাম্মদ রমজান”, মামুনুর রশিদ বলছেন এটা কি মগের মুল্লুক নাকিইত্যাদি) আলাদাভাবে ধারন করা হয়েছিল এবং এই অংশের জন্যই আলম খান তার বিখ্যাত সুচনা সঙ্গীতটি রচনা করেছিলেনপরে অবশ্য আসল দৃশ্যগুলি প্রচারিত হলে দেখা যায় যে এদের সাথে সুচনা দৃশ্যের শটগুলির মিল নেই
কিছু খুচরা তথ্যঃ
১) সংশপ্তক শব্দের অর্থ হয় জয় অথবা মৃত্যু
২) ফেরদৌসী মজুমদার হুমায়ুন ফরিদীর সাথে তার সংশপ্তক শুটিংয়ের স্মৃতিচারন করেছেন
৩) মুস্তফা মনোয়ারের উপলব্ধি – “সিরিজ নাটক বা ধারাবাহিক নাটকের প্রবক্তাও ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুনতখন এই ধরনের নাটক অর্থাৎ সিরিজ নাটক মানেই বলা হত সোপ অপেরামানে সাবান কোম্পানীর নাটকগৃহিনী দর্শকদের উপলক্ষ্য করে যে সেন্টিমেন্টাল নাটক হয় তাকে বলা হয় সোপ অপেরাআবদুল্লাহ আল মামুন সেই ধরনের সোপ অপেরায় না গিয়ে সুস্থ এবং নান্দনিকবোধে পূর্ণ নাটক চয়ন করলেননাম সংশপ্তকশহিদুল্লাহ কায়সার রচিত এই নাটকটি অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সে সময়েএই নাটকের সকল অভিনয় শিল্পীর বাচনভঙ্গী এবং প্রযোজনায় নানা বৈশিষ্ট ছিলসংশপ্তক আজও শ্রেষ্ঠ সিরিয়াল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে