Popular Posts

অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি চলে গেলেন

মঞ্চ-টিভি-বড়পর্দার শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি চলে গেলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ফাল্গুনের ১ তারিখের সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী শাহীন প্রথম আলো অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে হুমায়ুন ফরীদির ধানমন্ডির বাসভবনের কাছে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর বেলা দুইটায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও বাদ আসর এফডিসিতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়; এফডিসিতে জানাজা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমীতে। শিল্পকলা একাডেমীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হুমায়ুন ফরীদির মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর তাঁকে দাফন করা হবে।
এক বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন ছিল হুমায়ুন ফরীদির। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্তের মনে আসন করে নিয়েছেন এ অভিনেতা।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উত্সব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। এ উত্সবের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একজন মেধাবী ও শক্তিমান নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়ের অসাধারণত্বে যে আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ফরীদি, তাঁর সেই উচ্চতায় এ দেশের খুব কম মানুষই পৌঁছতে পেরেছেন।
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু ঢাকাতেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রেও অসামান্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চ নাটক, টিভি ও সিনেমায় অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। ফরীদি তাঁর কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’, ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘দহন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ (১৯৮২), ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ (১৯৮২), ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ (১৯৮৩), ‘ভবের হাট’ (২০০৭), ‘শৃঙ্খল’ (২০১০) প্রভৃতি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আশির দশকের শুরুতে হুমায়ুন ফরীদি প্রথম বিয়ে করেন। হুমায়ুন ফরীদির প্রথম সংসারে দেবযানী নামের এক মেয়ে রয়েছেন। এরপর তিনি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গেও তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়।
অভিনয়ের অসাধারণত্ব আর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গুণগত পরিবর্তন অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছর পূর্তি উত্সবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

No comments:

Post a Comment